৯ এম এম পিস্তল এর দাম | কেনার উপায় | লাইসেন্স করার নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আশা করি আপনি অনেক ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ৯ এম এম পিস্তল এর দাম সহ পিস্তল কেনার উপায়, পিস্তল কিনতে কি কি লাগে, পিস্তল লাইসেন্স করার নিয়ম ও পিস্তলের বিভিন্ন অংশের নাম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাই আপনি যদি পিস্তল সম্পর্কে এ টু জেড ধারণা পেতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত জেনে নিন। 

পিস্তল

পিস্তল হচ্ছে একধরনের হ্যান্ডগান। কখনো একে হ্যান্ডগানের একটি উপশাখা বলা হয় যাতে ব্যারেলের সাথে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। কখনো একে হ্যান্ডগান শব্দের পরিবর্তেও ব্যবহার করা হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে পিস্তল কোন ভাষার শব্দ? ওয়েব রিচার্স থেকে জানা যায় পিস্তল মূলত পর্তুগিজ ভাষার একটি শব্দ।

বিভিন্ন পিস্তলের নাম

বর্তমান পৃথিবীতে হাজার রকমের পিস্তল রয়েছে। এর মধ্যে থেকে জনপ্রিয় কিছু পিস্তলের নাম নিচে উল্লেখ করছি। 

  • 9 mm pistol
  • 2mm Kolibri
  • Akdal Ghost TR01
  • AMT Hardballer
  • AMT Backup
  • AMT AutoMag V
  • AMT AutoMag IV
  • AMT AutoMag III
  • Glock 20
  • Glock 19X
  • Glock 19
  • Glock 18
  • Glock 17
  • Battleworn Blaster
  • Barbaric Six-Shooter
  • Woeful Gun
  • Glinting Gilded Flintlock
  • Diabolical Flintlock
  • Eternal Titanium Shooter
  • Lament, Bond Of The Daywalker
  • Narcoleptic
  • Trooper Pistol
  • Maneater

৯ এম এম পিস্তল এর দাম

পৃথিবীতে সব থেকে বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় একটি পিস্তল হলো ৯ এম এম। বর্তমানে এই ৯ এম এম পিস্তল এর দাম ১৫০০০ টাকা হিসেবে জানা যায়।

পিস্তল কেনার উপায়

বর্তমান সময়ে এখন অনেক অনলাইন প্লাটফর্মে পিস্তল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অনলাইনে থেকে পিস্তল কেনার চেয়ে আপনি যদি একদম ঠিক লোকেশনে গিয়ে পিস্তল কেনেন তাহলে অনেক ভালো হয়। তবে পিস্তল সকল মানুষ কিন্তু কিনতে পারবে না। এজন্য একজন মানুষের আলাদা কিছু যোগ্যতা লাগবে। 

পিস্তল কেনার অন্যতম শর্ত গুলি হল:

বয়স ৩০ বছরের বেশি হতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি পিস্তল কিনতে চান তাহলে আপনার বয়স সর্বনিম্ন ৩০ বছর হতে হবে। 

যারা বাৎসরিক ২ লাখ টাকা সরকারকে কর প্রদান করে থাকে তারাই একমাত্র পিস্তল কিনতে পারবে।

পিস্তল কেনার জন্য কাগজপত্র গুলো মধ্যে নাগরিক সনদপত্র, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ট্যাক্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো সংগ্রহ করার পর আপনি পিস্তল কেনার জন্য রওনা হবেন। এখন আমাদের প্রশ্ন করবেন ভাই উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো তো আমি সংগ্রহ করেছি। তাহলে কোন জায়গায় আমি এই কাগজপত্র গুলো জমা দিয়ে পিস্তল কিনতে পারব। বাংলাদেশের পিস্তল বিক্রি করে এমন দুটি নামকরা দোকান হলো। 

শোরুম – ট্রপিকানা টাওয়ার, ৪৫ তোপখানা রোড, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, ফোন নম্বর: ৭১৭১৭৭১-২; ২৩/১১- বি, সি জি রোড, ব্লক# বি, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা- ১২০৭, ফোন নম্বর: ৯১৩০৭০৩, ৯১৩৭৩৬৮।

এছাড়াও ঢাকা পল্টন, বাইতুল মোকাররম মসজিদ এর সামনের রাস্তার অপজিটে (দক্ষিণ পাশে) অনেকগুলো পিস্তলের দোকান রয়েছে। এছাড়া আপনার যদি পরিচিত কোন দোকান থাকে তাহলে সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন। 

পিস্তল কিনতে কি কি লাগে

যেকোনো ব্যক্তি কিন্তু ইচ্ছা করলে পিস্তল কিনতে পারবে না। পিস্তল কেনার জন্য অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্দেশনা আপনাকে মানতে হবে। চলুন দেখে নেই পিস্তল কিনতে কি কি লাগবে। 

  • বয়স ত্রিশ বছরের বেশি হতে হবে, যারা বাৎসরিক ২ লাখ টাকা কর প্রদান করে থাকে তারাই একমাত্র পিস্তল কিনতে পারেন।
  • পিস্তল কেনার জন্য নাগরিক সনদপত্র, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ট্যাক্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • পিস্তল বডিগার্ড ব্যবহার করলে পিস্তল বডিগার্ড এর নামে লাইসেন্স করতে হবে।
  • আবার মালিক যদি কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে তাহলে মালিকের নামেও লাইসেন্স থাকতে হবে |
  • পিস্তল কেনার পর কোন কারনে তা হারিয়ে গেলে সাথে সাথে থানায় জিডি করতে হয়।
  • এক বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।
  • যেকোনো নির্বাচনের আগে পিস্তল স্থানীয় পুলিশের কাছে জমা দিতে হয়।

পিস্তল লাইসেন্স করার নিয়ম

পিস্তল কেনার পর আপনার প্রধান কাজ হল তার লাইসেন্স করা। পিস্তল বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ একজন ব্যক্তিত্ব ইচ্ছা করলো আর পিস্তল কিনতে পারলো তা কিন্তু নয়। এজন্য আপনারা আলাদা কিছু যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে পিস্তল লাইসেন্স করাও একটি কঠিন বিষয়। কারণ পিস্তল লাইসেন্স করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। 

পিস্তল লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে যে শর্তগুলো পূরণ করতে হবে তা নিম্নরুপঃ

  • বাংলাদেশের একজন বৈধ নাগরিক হতে হবে।
  • আবেদনকারীর জীবনের যদি কোন বাস্তব ঝুঁকি থাকে, অর্থাৎ আত্মরক্ষার কাজে যদি ব্যবহার করে তাহলে আবেদন করতে পারবে। 
  • পিস্তল আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ৩০ বছর হতে হবে।
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই কর দাতা হতে হবে, বছরে ন্যূনতম দুই লক্ষ টাকা কর প্রদান করতে হবে। 
  • অনুমতি পেলে আবেদনকারী পিস্তল বাইরে থেকে আনতে পারেন, বা দেশীয় বৈধ কোন ডিলারের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবেন। 
  • একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইটি পিস্তলের লাইসেন্স করতে পারবেন। 

উপরোক্ত শর্তগুলো আপনি যদি পূরণ করতে পারেন তাহলে খুব সহজে পিস্তলের লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদি কোন একটি শর্ত আপনি পূরণ করতে না পারেন, তাহলে লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদন মঞ্জুর করবে না। 

পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার নিয়ম

পিস্তলের লাইসেন্স করার জন্য আপনাকে আগে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। আবেদন ফরম সংগ্রহ করার পর, উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র দিয়ে ফিলাপ করতে হবে। আবেদন করার পর, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবি শাখা তদন্ত করে আপনার তথ্য মিলিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করবে। 

এরপর জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদনের পর সেটি পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঞ্জুর করলে জেলা প্রশাসক ওই আবেদনকারীর বরাবরে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করেন। এক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সাথে বৈধ নাগরিকত্বের সনদপত্র, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ট্যাক্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও লাইসেন্স ফি ৩,০০০ জমা দিতে হবে। এভাবে মূলত আপনি পিস্তলের লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। 

পিস্তলের লাইসেন্স ফরম

পিস্তলের লাইসেন্স করার জন্য অবশ্যই আপনাকে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় অবশ্যই আপনাকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। আপনি ইচ্ছা করলে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে প্রিন্ট করতে পারেন। পিস্তলের লাইসেন্স ফরম “ডাউনলোড করুন” । 

রিভলবার ও পিস্তলের পার্থক্য

পিস্তল ও রিভলভার উভয়েই হচ্ছে হ্যান্ড গান। একটি রিভলভার একটি সময়ে ৬ টি শট ফায়ার করতে পারে এবং বাজারে ১৮ টি শট ফায়ার করতে সক্ষম। 

প্রতিটি শটের পরে একটি রিভলবার ক্ষেত্রে হাতুড়ি ফিরে করার প্রয়োজন হয়, কিন্তু পিস্তলের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োজন হয় না। 

পিস্তলের বিভিন্ন অংশের নাম

একটি পিস্তলের বিভিন্ন রকমের অংশ থাকে। পিস্তল চালানো শেখার আগে আপনাকে এই অংশের সাথে পরিচিত হতে হবে। চলুন চিত্রের মাধ্যমে পিস্তলের বিভিন্ন অংশের নাম দেখে নেই। 

পিস্তলের বিভিন্ন অংশের নাম

পিস্তল চালানোর নিয়ম

পিস্তল যেহেতু একটি আগ্নেয় অস্ত্র। সেক্ষেত্রে আপনাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। কারণ আপনি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে অন্যের ক্ষতি হতে পারে। এইজন্য পিস্তল কেনার আগে অবশ্যই এটা কিভাবে চালাতে হয় তা জানতে হবে। এই জন্য আপনি ইচ্ছা করলে পিস্তল ছাড়ানোর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। প্রশিক্ষন নেওয়ায় সব থেকে ভালো হবে বলে আমরা মনে করি। 

শেষ কথা: এই ছিল আজকে আমাদের পিস্তল সম্পর্কে বিস্তারিত একটি আলোচনা। পিস্তল কিভাবে ব্যবহার করতে হয় ও পিস্তল কেনার জন্য কি কি শর্ত পূরণ করতে হবে তার সবকিছু নিয়ে আজকে আলোচনা করেছি। আশা করি যারা পিস্তল কিনতে চাচ্ছেন তাদের আজকের আর্টিকেল অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ। অবৈধ পিস্তল কোথায় পাওয়া যায় কিংবা অবৈধ পিস্তলের দাম কত এসব বিষয়কে আমরা কখনো প্রমোট করিনা এবং আমরা এসব বিষয়ে জ্ঞাতও নয়।   আপনার যদি আত্মরক্ষার কাজে পিস্তল কিনতে চান তাহলে অবশ্যই বৈধভাবে কিনতে হবে। তারপর আপনাকে লাইসেন্স সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে পরবর্তীতে আপনার এই পিস্তল নিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।