মানিকগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, নামকরণ ও দর্শনীয় স্থান

আপনি এই পোষ্টে মানিকগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, মানিকগঞ্জ জেলা পরিচিতি, মানিকগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি, মানিকগঞ্জ বিখ্যাত কেন, মানিকগঞ্জ জেলার বিখ্যাত স্থান/ জায়গা ও মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

লোক সংগীত ও হাজারি গুড়ের দেশ এবং খাদ্যে উদৃত্ত মানিকগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। ১৮৪৫ সালের মে মাসে এটি মানিকগঞ্জ মহকুমা নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই মহকুমা প্রথম ফরিদপুর জেলার অধীন ছিল। পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ঢাকা জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ১৯৮৪ সালের ১ লা মার্চ মানিকগঞ্জ কে জেলায় উন্নীত করা হয়। যার আয়তন ১৩৭৮.৯৯ বর্গ কি.মি এবং মোট জনসংখ্যা ১৪, ৪৭, ২৯৮জন।

মানিকগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

মানিকগঞ্জ জেলা খেজুর গুড় এর জন্য বিখ্যাত। এক কালে এখানকার মানুষ খুব খেজুর গুড় পছন্দ করতো।

তারা এটা নিয়ে ভালো বিপনন ও করতো। এছাড়াও মানিকগঞ্জ বিখ্যাত হওয়ার পেছনে আরও রয়েছে এর বিখ্যাত স্থান, নামকরণ, ব্যক্তিবর্গ ও ইতিহাসের উপর। 

মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ

মানিকগঞ্জ, নাম শুনলেই মানিক কথাটা মাথায় আসে। সংস্কৃত ‘মাণিক্য’ শব্দ থেকে মানিক শব্দটি এসেছে। মাণিক্য ও মানিক সমার্থবোধক শব্দ। মাণিক অথ চুণি, পদ্মরাগ, মণি কিংবা মুক্তা। মাণিকের ইংরেজি ৎঁনু বা লববিষ। মানিক শব্দটি মাণিকের তদ্ভব রূপ। ‘গঞ্জ’ শব্দটি ফার্সি যার অর্থ হাট, বাজার বা শস্যাদি ক্রয় বিক্রয়ের স্থান।

সুলতানী আমল থেকে শুরু করে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ফার্সি ছিল এ অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ইংরেজি প্রচলিত হওয়ার পরও দীর্ঘদিন স্কুল কলেজে ফার্সি পড়ানো হতো। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক আরবি ফার্সি শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়ে। ‘গঞ্জ’ শব্দটি এভাবেই আমাদের ভাষায় স্থান করে নেয়।

‘মনিকগঞ্জ’ নামকরণটি কখন হয়েছিল, সে সম্পর্কে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কষ্টকর।১৯৪৫ সাল থেকে ‘মানিকগঞ্জ’ নামের উদ্ভব দেখা যায়। এর পূর্বের কোন ঐতিহাসিক বিবরণে, মানচিত্রে বা সরকারি নথির-পত্রে ‘মানিকগঞ্জ’ নামের উল্লেখ পরিলক্ষিত হয় না।

স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, বহু অলি আউলিয়ার পূণ্যভূমি ধামরাই থেকে জনৈক দরবেশের নির্দেশক্রমে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে মানিক শাহ নামক এক সুফি দরবেশ সিংগাইর উপজেলার ‘মানিকনগর’ গ্রামে আগমন করেন এবং খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন।

পরবর্তীকালে তিনি এ খানকা ছেড়ে হরিরামপুর উপজেলায় দরবেশ হায়দার শেখ এর মাজারে গমন করেন এবং ইছামতির তীরবর্তী জনশূন্য চরাভূমি বর্তমান মানিকনগরে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। এ খানকাকে কেন্দ্র করে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে। উক্ত জনজসতি মানিক শাহ’র পূণ্য স্মৃতি ধারণ করে হয়েছে ‘মানিকনগর’।

মানিক শাহ শেষ জীবনে ধামরাইতে অবস্থিত আধ্যাত্মিক গুরুর দরবার শরিফে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পুনরায় দ্বিতীয় খানকা ছেড়ে ধলেশ্বরীর তীরে পৌঁছেন। জায়গাটির নৈসর্গিক দৃশ্য তাঁর পছন্দ হয়। তিনি এখানে খানকা স্থাপন করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় খানকার ভক্তবৃন্দও এখানে এসে দীক্ষা নিত। মানিক শাহর অলৌকিক গুণবালীর জন্য জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করতো। এমনকি দস্যু তষ্করগণও কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে খানকার ধারে কাছে আসতো না। তাই ভক্তবৃন্দ ছাড়াও বণিকগণও এখানে বিশ্রাম নিতো এবং রাত্রি যাপন করতো।

সওদাগরী নৌকাগুলো নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে খানকার তীরে নোঙর ফেলে রাত্রি কাটাত। এভাবেই ধলেশ্বরীর তীরে মানিক শাহ’র খানকাকে কেন্দ্র করে জনবসিত মোকাম প্রতিষ্ঠিত হয়। মানিক শাহ এক রাতে সোনারগাঁওয়ের পথে উধাও হয়ে যান। মানিক শাহ চলে গেলেও তাঁর খানকা এবং তৎসংলগ্ন মোকাম বা গঞ্জ পরবর্তীকালে তাঁর নামানুসারেই “মানিকগঞ্জ” হয় বলে ধারণা করা হয়। উক্ত খানকা তৎ সংলগ্ন গঞ্জ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও ১৮৪৫ সালে সম্ভবত এ সুফি দরবেশের নামানুসারেই মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে।

মানিকগঞ্জ জেলার বিখ্যাত স্থান

➤আরিচা ঘাট-
মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা ঘাট এই এলাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। যমুনা সেতুর আগে এই ঘাট দিয়েই যানবাহন পারাপার করা হতো

➤বালিয়াটি প্রাসাদ –
মানিকগঞ্জ জেলার পুরাকীর্তির ইতিহাসে বালিয়াটির জমিদারদের অবদান উল্লেখ যোগ্য। বালিয়াটির জমিদারেরা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে আরম্ভ করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বছর বহুকীর্তি রেখে গেছেন যা জেলার পুরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে।

➤তেওতা জমিদার বাড়ি –
শিবালয়ঃ মানিকগঞ্জ উপজেলাধীন শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িটি বাবু হেমশংকর রায় চৌধুরী, বাবু জয় শংকর রায় চৌধুরী পিং দুই সহোদর ভ্রাতার নিজ বসতবাড়ী ছিল। তেওতা অবস্থান করে তারা জমিদারি পরিচালনা করতেন।

➤ধানকোড়া জমিদার বাড়ি।

মানিকগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

➤রফিকউদ্দিন আহমদ – ভাষা শহীদ।
➤হারুনার রশীদ খান মুন্নু – সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক।
➤খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন – ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য, চীফহুইপ। সাবেক মহাসচিব, বিএনপি।
➤ড. অমর্ত্য সেন – নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক।
➤বিচারপতি এ কে এম নূরুল ইসলাম – বাংলাদেশের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিচারপতি।
➤হীরালাল সেন – উপমহাদেশের চলচিত্রের জনক, চিত্রগ্রাহক।

➤খান আতাউর রহমান – সুরকার, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক।
➤মাসুদ আলি খান- অভিনেতা।
➤মমতাজ বেগম – সংগীত শিল্পী, সংসদ সদস্য।
➤কিশোরীলাল রায় চৌধুরী।
➤ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন – প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক, সাহিত্যিক, গবেষক।
➤মুনীর চৌধুরী – শহীদ বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী।
➤শামসুজ্জামান খান – সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি।
➤মাহবুবা রহমান

➤ফারুক আহমেদ – জনপ্রিয় নাট্যভিনেতা।
➤নীনা হামিদ – প্রখ্যাত লোকশিল্পী।
➤নাইমুর রহমান দুর্জয় – বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক, সংসদ সদস্য।
➤অমলেন্দু বিশ্বাস – বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি যাত্রাপালার পথিকৃৎ। প্রখ্যাত যাত্রাভিনেতা।
➤সৈয়দ আবুল মকসুদ – সাহিত্যিক এবং প্রথম আলোর নিয়মিত কলাম লেখক।
➤কিরণ চন্দ্র রায় – বাউল সংগীত শিল্পী
➤বিচারপতি নুরুল ইসলাম – সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *