আসলামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক। আবারো হাজির হয়ে গেলামআপনাদের সামনে নতুন একটি শিক্ষা বিষয়ক টিউটোরিয়াল নিয়ে। আজকে আপনাদের সামনে আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে ভাবসম্প্রসারণ সম্পর্কে আলোচনা করবো। ষষ্ঠ প্রেমী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি পরীক্ষায় এই ভাব সম্প্রসারণ-আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই কারণে আপনাকে খুব মনোযোগ সহকারে এই ভাবসম্প্রসারণ বুঝে নিতে হবে।
আমরা আপনাকে কখনোই বলবো না এই ভাব সম্প্রসারণ আপনি হুবহু মুখস্ত করেন। কারণ মুখস্ত বিদ্যা চিরস্থায়ী হয় না। তাই আপনা আপনি যদি বুঝে নিজে নিজেই এই ভাব সম্প্রসারণ লিখতে পারেন। তাহলে আপনার আজীবন এই ভাবসম্প্রসারণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকবে। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আমরা আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে ভাবসম্প্রসারণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে ভাবসম্প্রসারণ
একটি ভাব সম্প্রসারণের মূলত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত হয়। মূলভাব, সম্প্রসারিত ভাব ও শিক্ষা। ঠিক তেমনিভাবে আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে ভাবসম্প্রসারণ মোট তিনটি অংশের সমন্বয়ে লিখতে হবে। চলুন আজকের ভাবসম্প্রসারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
–––––––––––––––––––––––এখান থেকে শুরু––––––––––––––––––––––
মূলভাব:
আমাদের সমাজে উপদেশ দেওয়ার মানুষের অভাব নেই। আমাদের সমাজ ও দেশে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা উপদেশ দিতে খুবই পছন্দ করে থাকে। তবে তাদের নিজেদের জীবনে সে কাজের প্রতিফলন খুব একটা দেখা যায় না। অর্থাৎ তারা যে কাজের উপদেশ দেয় তারা সেই কাজে নিজেকে সফল করতে পারে না। অসফল ব্যক্তিরা যখন কাউকে কোনো কিছু শিক্ষা দিতে চেষ্টা করে,তখন কিন্তু সেটা খুব কমই গ্রহণযোগ্য মনে হবে। ভালো কাজ করতে বলা খুবি সহজ, তবে ভালো কাজ করে দেখানো অনেক কঠিন। অর্থাৎ সবাই ভালো কাজের উপদেশ দিতে পারলেও, সেই কাজটা করে দেখাতে কেউ পারে না।
সম্প্রসারিত ভাব:
মানবজাতির স্বভাব হলো অন্ধকার ও নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ। অর্থাৎ আমরা সবাই অন্ধকার ও নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিবেশী আকর্ষিত হয়ে পড়ি। কারণ এই সব খারাপ কাজে মানুষ সহজাত প্রবৃত্তিগতে আকৃষ্ট হয়। তবে মানুষের উচিত এসব থেকে দূরে থেকে জীবনে সুন্দর ও সত্যের বিকাশ ঘটানোই প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু এসব মিথ্যা ও অন্ধকার জীবনকে উপেক্ষা করে সততার পথ অবলম্বন করা ভীষণ কঠিন হয়ে যায়।
আর এই কঠিন কাজটি নিজে সম্পূর্ণ করার পরই কেবল অন্যদেরকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। অর্থাৎ আমি আগে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করার পর,অপরকে সেই জিনিসটা শিক্ষা দিলে বেশি প্রাধান্য পাওয়া যাবে। তবেই সেই শিক্ষা মানুষের কাছে অর্থবহ হয়ে উঠবে ও অধিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে। একজন নীতিবান ও সত্যিকারের মানুষ তার সারাজীবনে ন্যায়, নীতি, বিনয়ী ও উদারতা প্রকাশ করলেই কেবল অন্যরা তার নিকট থেকে উপদেশ গ্রহন করবে। তখন আর আপনার কে অন্যকে উপদেশ দিতে হবে না। অন্য সকল মানুষ আপনার নিকটস্থে উপদেশ নিতে আসবে।
চলুন এই বিষয়ে একটি বাস্তব উদাহরণ বলা যাক। এখনো এক মহিলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাছে এসে একটি বিষয়ে পরামর্শ চান। সে মহিলার ছেলে মিষ্টি খেতে খুবই পছন্দ করে। তখন সেই মহিলা মহানবী মুহাম্মদ (সা) কে তার ছেলেকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন মহানবী মুহাম্মদ (সা) সেই মহিলাকে আগে মিষ্টি পরিহার করতে বলেন। তারপর তার সন্তানকে মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত রাখতে বলতে পারবে।
মহানবী মুহাম্মদ (সা) সেই মাকে এক সপ্তাহ পরে আসতে বলেন। তারপর এক সপ্তাহে তিনি আগে মিষ্টি খাওয়া পরিহার করেন, তারপর সেই ছোট ছেলেটিকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করেন। এই উদাহরণ আরো স্পষ্ট করে যে, নিজে না করে, অন্যকে কিছু করতে বলাটাই অন্যায়। ধরুন আপনার সন্তান যদি সিগারেট খায়। তাহলে আপনাকে প্রথমে সিগারেট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তারপর আপনার ছেলেকে সিগারেট খাওয়া থেকে নিষেধ করতে হবে। তাহলে দেখবেন এটা কাজে লাগবে।
শুধু আমাদের ইসলাম ধর্মেই এই কথা আছে তা কিন্তু নয়, অন্যান্য প্রায় সকল ধর্মেই একই কথা বলা আছে। ইসলামী মনীষী ও গুণীজনদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আপনি এই বিষয়টি দেখতে পারবেন। তাদের চরিত্রে এই গুণেরই গুণান্বিত ছিল। তারা সব সময় আগে ভালো কাজ করতো। তারপর অন্য সকল মানুষকে ভালো কাজ করার জন্য উপদেশ দিতো। সুতরাং উপদেশ দেয়ার আগে আমাদের অবশ্যই চিন্তা করতে হবে আমরা নিজেরা কাজটি করতে কতটুকু সক্ষম।
শিক্ষা:
আজকের ভাবসম্প্রসারণ থেকে আমরা এই শিক্ষা অর্জন করলাম যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে উপদেশ দেওয়ার পূর্বশর্ত হলো নিজে সেই কাজের যথার্থ অনুশীলন করা। অর্থাৎ, অন্যকে যেকোনো কাজে উপদেশ দেওয়ার আগে আপনাকে আগে সেই কাজটি করতে হবে। আপনি যদি সেই কাজে নিজেকে জড়িত করতে না পারেন। তাহলে অন্যকে উপদেশ দিয়ে কোন লাভ হবে না।
পরিশেষে কিছু কথা
এই ছিল আজকে আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে ভাবসম্প্রসারণ নিয়ে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা। এই ভাব সম্প্রসারণের মূল শিক্ষা হলো নিজে ভাল কাজ করার পর, অন্যকে সেই কাজের উপদেশ দেওয়া। অর্থাৎ, না আপনি যদি সত্যবাদী না হয়ে অন্যকে সত্যবাদী করার চেষ্টা করেন। তাহলে কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব হবে না। এর মূল কারণ হলো আপনাকে আগে সত্যবাদী হতে হবে। তারপর আপনি অন্যকে সত্যবাদী করতে পারবেন।
আদিকাল থেকে এই রীতিনীতি চলে আসছে। কিয়ামত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঠিক একই রকম থাকবে। তাই শুধু পড়াশোনা নয় বাস্তব জীবনে সকল ক্ষেত্রে আমাদের এই ভালো গুণটি প্রয়োগ করতে হবে। যা দ্বারা মানুষ ভালো কাজের উৎসাহিত পেতে পারে। এইজন্য আমাদের সবার উচিত নিজেকে ভালো কাজের সাথে সবসময় জড়িত রাখা। তাহলে অন্যরা আপনার ভালো কাজের উৎসাহ পেয়ে নিজেরাও ভালো হবে।