গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়

বর্তমানে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন৷ গ্যাস্ট্রিক এখন আর বয়স দেখে হয় না। যে কারোই হতে পারে। এই পোষ্টে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা পরবর্তীতে আরো জটিল ও কঠিন সমস্যার জন্ম দিতে  পারে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় জানা জরুরি। আর প্রতিকার থেকে যে প্রতিরোধ ভালো সে কথা আমরা কে না জানি। আজ জেনে নিব গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচতে কি করবেন। 

[ads1]

গ্যাস্ট্রিক কি?

প্রথমেই জেনেনি গ্যাস্ট্রিক কি কেনো হয়। পাকস্থলি আমাদের পরিপাকের অন্যতক অঙ্গ। আমরা যা কিছু খাই তা গ্যাস্ট্রিকের জারক রস দ্বারা পরিপাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে৷ হজম প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু পাকস্থলী গ্রন্থি থেকে বেশ কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়৷ তার মধ্যে গ্যাস্ট্রি সাইড বা গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির রস অন্যতম।

দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে এই রস পাকস্থলীতে এসে জ্বালা পোড়ার সমদ্যা সৃষ্টি করে। যার প্রভাবে পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারও হতে পারে। তাই কোন কারণে যাতে গ্যাস্ট্রিক  রসের তারতম্য না ঘটে সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। এছাড়া পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হতে পারে  গ্যাস্ট্রিক। 

[ads2]

লক্ষণ

বমির ভাব হয়ে পেটে গ্যাস জমে পেট ফুলে থাকে গ্যাস্ট্রিক হলে। খাবার খেতে অরুচি হওয়া। বুকে চাপ অনুভূত হওয়া সহ বুক ব্যথা করে অনেক সময়৷ বুক গলা জ্বালা করে। 

কেনো হয়?

গ্যাস্ট্রিকের আসল কারণই খাবারে অনিয়ম করা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। আপনি যদি সকালের খাবার দুপুরে, দুপুরের খাবার রাতে বা বিকালে গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তেল চর্বি, অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার হতে পারে গ্যাস্ট্রিকের আরেকটি কারণ। তাই রুটিন মাফিক খাবার খাওয়া,স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিপান গ্যাসস্ট্রিক প্রতিরোধে অন্যতম ভূমিকা রাখে। 

চিকিৎসাঃ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় রোগীরা প্রায়শই ওমিপ্লাজল জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করে থাকে। যা গবেষকদের মতে দীর্ঘ দিন ব্যবহাতের ফলে ক্যান্সার হতে পারে। এই ওষুধ দীর্ঘদিন গ্রহণে পাকস্থলির পিএইচ কমে যায়, অনেক সময় রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয়। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগলে এর গোড়া থেকেই সমাধান করা উচিত।

কেনোনা আমরা সবাই জানি প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম। তাই গ্যাস্টিকের সমস্যার মুক্তির জন্যে চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি সুন্দর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। 

[ads3]

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে করণীয়

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে প্রথমেই সময় মত খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন। সকালে ভারি নাস্তা করুন। অবশ্যই তা তেল চর্বিমুক্ত হতে হবে। সালাদা সবজি রাখার চেষ্টা করুন সকালের নাস্তা ও প্রতিবেলার খাবারে। এতে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে। হজমে সুবিধা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।

এছাড়া একবারে অনেক খাবার না খেয়ে সময়ে সময়ে কম কম খাওয়া ভালো। ভরপেট খাবার খেলে অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়া করে,সে ক্ষেত্রে নবীর সুন্নত অনুযায়ী পেটের দুই অংশ খাবার অন্য অংশ পানি ও এক অংশ খালি রাখার চেষ্টা করুন। এতে খাবার পরিপাকের যেমন সুবিধা হয় তেমনি স্বাস্থ্য ভালো থাকে। 

খাবার খাওয়ার সময় মনোযোগ খাবারে রাখুন,আস্তেধীরে খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান। মনে রাখবেন খাবার আপনার শরীরেরই প্রয়োজন নয় কেবল। আত্নারও পরিতৃপ্তি দিয়ে থাকে খাবার। তেল চর্বি মশলা যুক্ত খাবার যত সম্ভব এড়িয়ে যান। এতে বুক জ্বালা পোড়া কমে যাবে। বেশি বেশি পানি পান করুন। খাবার খাওয়ার পর শুয়ে বসে না থেকে হাঁটার চেষ্টা করুন৷

কোমলপানীয় ত্যাগ করুন। এটি আপনার ওজন বাড়িয়ে দেয়া সহ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগাবে বেশি। আপনি যদি মদ্যপান বা ধুমপান করে থাকেন তাহলে তা শীঘ্রই ত্যাগ করুন। 

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি

এতক্ষণে আপনি গ্যাস্ট্রিক কি, কেন হয় এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জেনেছেন। এবার জানবেন গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

[ads4]

আদা

 আদার রস গ্যাস্ট্রিকের মহাঔষুধ। আদার রসের উপাদান বুক জ্বালাপোড়া, বুকের চিনচিন ব্যথা, বদহনমের সমস্যা দূর করবে। যেভাবে ব্যবহার করবেন: 

১। আদা কুচি কুচি করে কেটে পানির মধ্যে মিশিয়ে তারপর পানি ফুটান। পানি ফুটানো হলে তা ১০ মিনিটের মতো নামিয়ে রাখুন এবং দিনে ২/৩ বার চায়ের মত তা পান করুন কুসুম গরম । চাইলে এর সাথে মধু মিশাতে পারেন, যা ভালো ফলাফল দিবে।

২। আদাকে ব্লেন্ড করে রস করুন, এই রস প্রতিদিন দুপুরে ও রাতে খাবার খাওয়ার আগে খালি পেটে খাওয়ার চেষ্টা করুন। মধু মিশিয়ে খেলে ঝাঝ কম লাগবে, খেতেও সুস্বাদু মনে হবে। 

৩। শরীর সতেজ ও শীতল রাখতে আদা বেশ উপকারি। তাই যখনই ইচ্ছে হবে,মনে পড়বে এক টুকরো আদা মুখে পুরে সুইং গামের মত চিবিয়ে খান। 

See also  ১০+ হার্টের সমস্যার লক্ষণ সম্পর্কে জানুন

[ads5]

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে পানির ব্যবহার

১। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অন্তত দুই গ্লাস নরমাল তাপমাত্রার পানি পান করুন৷ যা আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

২। রাতে ঘুমানোর আগে হাল্কা গরম পানি পান করুন। 

৩। আমাদের শরীরের ৭৫% পানি। তাই পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে শরীর সতেজ রাখুন 

দইয়ের ব্যবহার

দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া হজমে সাহায্য করে। প্রতিদিন খাবারের সাথে অল্প দই গ্রহণের চেষ্টা করুন। যদি পারেন দই কলা মধু একসাথে মিশিয়ে খান। দেখবেন উত্তম ফলাফল পাবেন। 

আলুর ব্যবহার

আলুর রস বের করে নিন ব্লেন্ডার ব বেটস। রাতে ও দুপুরে প্রতিদিন খাবার গ্রহণের অন্তত দুইঘন্টা আগে গরম পানিতে মিশিয়ে আলুর রস খান। 

শাকসবজি খাওয়া

গাজর,শসা,সবুজ শাক উত্তম খাবার। এসব সবজি মাছ মাংস থেকে হাজার গুন উপকারি সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে। প্রতিদিন অবশ্যই শাকসবজি খান।  এতে ফাইবার আছে। যা আপনার রোগপ্রতিরোধ  ক্ষমতা বাড়ানো সহ  বেশিক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করবে। ও আপনাকে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দিবে। 

উপসংহার

গ্যাস্ট্রিক এখন সকলের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে স্টমাক ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি রোগ হতে পারে। তাই সময় থাকতে সচেতন হয়ে নিজের জীবন যাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *