আজকের পোষ্টে আমরা জানবো মেজাজ খিটখিটে হওয়ার কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে। সবাই একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু তাতে যদি অনাঙ্খিত কোনো কারণ থাকে তার মধ্যে মেজাজ খিটখিটে হওয়া একটি।
খিটখিটে মেজাজ কি
মেজাজ খিটখিটে বলতে অল্পতে রেগে গিয়ে অযথা দেখানো প্রতিক্রিয়া কে বোঝায়। বাইরে থেকে কাউকে খিটখিটে বুঝা যায় না। যখনই তার প্রকাশ ঘটে তিব্র ভাবে, যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, মুখে যা আসে তাই বলে ফেলে এমন অবস্থাকে তখন আমরা বলি মেজাজ খিটখিটে। অনেক কারণে মেজাজে তারতম্য হতে পারে। এমন হতে পারে মেজাজ খিটখিটে হওয়া দীর্ঘ স্থায়ী অথবা কম সময়ের জন্যে হয়। অনেক সময় কোন অসুখ পরবর্তী সময়ে অথবা রোগের উপসর্গ হতে পারে মেজাজ খিটখিটে হওয়া।
খিটখিটে মেজাজের লক্ষণ
১. অতিমাত্রায় হতাশ হয়ে থাকা মেজাজ খারাপের অন্যতম লক্ষণ।
২. অল্পতে রাগ প্রকাশ করা।
৩. রেগে গিয়ে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করা।
৪. মুখে যা আসে তাই বলে প্রকাশ করা।
৫. উচ্চ শব্দে কথা বলা।
৬. নানা রকম শারিরিক অঙ্গ ভঙ্গি করা।
৭. মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে নিজেকে বা অন্যদের আঘাত করা।
৮. রেগে গিয়ে নিজিস ভাঙা।
দীর্ঘ মেয়াদে মেজাজ খিটখিটে থাকলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
১. দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ ও হতাশা কাজ করা।
২. সম্পর্ক নষ্ট হওয়া।
৩. খিটখিটে মেজাজের জন্যে আশপাশের লোকেদের অসুবিধা হওয়া৷
৪. কর্মক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলা।
৫. একসময় নিজের প্রতিও হতাশা কাজ করা।
মেজাজ খিটখিটে হওয়ার কারণ
মেজাজ খিটখিটে হওয়ার নানাবিধ কারণ বিদ্যমান তার মধ্যে অন্যতম কারণ গুলির উল্লেখ করা হলো:
- মোবাইল-টিভি-ল্যাপটপ সহ ডিভাইসের সাথে বেশি সময় কাটানো।
- মানসিক দুশ্চিন্তা, চাপ থেকে হতে পারে।
- মদ্যপান বা যে কোন মাদক/ নেশা গ্রহণের অভ্যাস থাকলে।
- যে কোন রকম শারীরিক অশান্তির কারণে মেজাজ খিটখিটে হতে পারে।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে অনেকের মেজাজ খারাপ হয়।
- অতিরিক্ত কাজের চাপ।
- অনিদ্রা।
- অলস জীবন যাপন করা।
- জ্বর-সর্দিকাশি মাথা ব্যথা জনিত সমস্যার কারণে মেজাজ খিটখিটে হতে পারে।
- দাঁতে ব্যথা হলে অশান্তি হতে পারে।
- মাসিকের সময় মেয়েদের মেজাজের তারতম্য ঘটতে পারে।
- কানে সংক্রমণ মেজাজে তারতম্য আনে।
- যেকোন প্রকার ফ্লু হলে মেজাজ খিটখিটে হতে পরে।
- বাইপোলার ডিস-অর্ডারের অন্যতম লক্ষণ মেজাজের তারতম্য হওয়া।
- বয়ঃসন্ধিকালিম সময়ে হরমোনের উঠানামার কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়।
- অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে মেজাজ খারাপের লক্ষণ দেখা যায়।
- সিজোফ্রেনিয়ার মত কঠিন মানসিক রোগের পূর্বলক্ষণও মেজাজ খিটখিটে হওয়া।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০ এর পর মেজাজ খিটখিটে হওয়া মাসিক বন্ধ হওয়ার পূর্ব লক্ষণ
খিটখিটে মেজাজের ঘরোয়া প্রতিকার
মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সমস্যা একটি মানসিক সমস্যা। যা মনোযোগ হীনতা, শারিরীক অশান্তি সহ আরো নানাবিধ মানসিক ও শারিরীক কারণে হতে পারে। অন্যান্য রোগের ন্যায় মেজাজ খিটখিটে অবস্থার চিকিৎসার আগে তার প্রতিকার করার চেষ্টা করাই ভালো। তবে কারো প্রকৃতপক্ষেই এই সমস্যা দেখে দিলে চিকিৎসা নিতে হবে।
খিটখিটে মেজাজ ঠিক করতে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন অথবা নিয়ম গুলো নিজেই মেনে চলতে পারেনঃ
চিকিৎসক আপনার রোগের মূল কারণ প্রথমেই অনুসন্ধান করতে বলবে। যে ক্ষেত্রে আমি কারণ দেখাতে পারবেন না যেমন বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের কারণ অনুসন্ধান করতে বলা হয়।
চিকিৎসক আপনার রোগের ইতিহাস পূর্ণাঙ্গরূপে জানার চেষ্টা করবে এবং গোড়া থেকে সমস্যার সমাধানে কাজ করবেন।এসব ক্ষেত্রে আচরণগত থেরাপি দেয়া হয়। তবে তার পূর্বে এই রোগের আনুসঙ্গিক সকল কারণ জেনে নিবে।
মনোযোগ ফিরিয়ে আনে এবং মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি দেয় এমন কাজ যেমন যোগ ব্যায়াম,ধ্যান করতে দেয়া হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন হলে তাকে তাও দেয়া হয়। যেমন অনিদ্রার কারণে যদি মেজাজ খিটখিটে হয় এবং আপনার ইমশসোমনিয়া থাকে তবে ঘুমের ওষুধ দিতে পারে। হতাশা প্রতিরোধ কারি ট্যাবলেট সহ যথাউপযুক্ত ওষুধ দিতে পারে।
সেক্ষেত্রে আপনি নিজে এই সমস্যার সমাধান চাইলে নিজেই নিয়মিত নিয়মকানুন মেনে জীবনকে সুন্দর করতে পারেন। খিটখিটে মেজাজ প্রতিরোধ করতে যা করতে পারেনঃ
মন শান্ত করা
খিটখিটে মেজাজ প্রতিরোধ করতে মনকে শান্ত করা জরুরি। তাই আপনাকে মানসিক অশান্তি দেয় এমন মানুষ ও বিষয় থেকে দূরে থাকুন।
ধর্মীয় নিয়ম মানা
মন শান্ত রাখা ও নিয়ম মানার অন্যতম উপায় ধর্মীয় জীবন যাপন করা। নিয়মিত নামাজ পড়া, পূজাপাঠ মনকে শান্ত করে। এছাড়া চেষ্টা করুন নিয়মিত মসজিদ মন্দির সহ ধর্মীয় প্রতিসষ্ঠান গুলোতে যাতায়াতে।
ধ্যান করা
ধ্যান বা মেডিটেশন মনকে স্থীর করে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ধ্যান করার সমস্যা আপনি নিজের প্রতি মনোযোগী হোন যা অত্যন্ত জরুরি।
ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকা
অতিরিক্ত মোবাইলফোনের ব্যবহার, সোশাল মিডিয়া এডিকশন, দীর্ঘ সময় ভিডিও গেইম খেলা মেজাজ খিটখিটে করে দেয়। তাই দীর্ঘ সময় যেকোন প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমনঃ মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাব ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
খেলাধুলা করা
শিশুকিশোর দের, ও তরুণদের মাঝে মেজাজ খিটখিটে হওয়ার প্রবণতা বর্তমানে বেশি৷ তারা যদি বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করে বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সামাজিকীকরণ ঘটে তাদের মধ্যে তবে মেজাজ খিটখিটে হওয়ার হার কম হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
নিয়মিত ব্যায়াম ও শারিরীক কসরত মেজাজ ফুরফুরে রাখে। কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। কারণ এতে স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
নিয়মিত খাবার খাওয়া
অনেক সময় খাবারে অনিয়ম হলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে মেজাজ খিটখিটে ভাব সৃষ্টি হয়। তাই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
শাকসবজি ও পানি
খাবারে শাকসবজি ও পানির পরিমাণ সুষম রাখতে হবে। এতে মন শরীর শান্ত থাকে। ফলমূল শাকসবজি এবং পরিমিত পানি পান আপনাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করবে। যা আপনাকে স্বাস্থ্যবান করে তুলবে এবং মানসিক প্রশান্তিও দান করবে।
সোশ্যাল মিডিয়া ত্যাগ করা
সাম্প্রতিক সময়ে এলান মাস্ক তার এক বক্তিতায় বলেন মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে থাকলে বেশি খুশি থাকে। যা বেশ কিছু গবেষণায়ও দেখা গিয়েছে। আবার ব্যক্তিগত জীবন থেকে লক্ষ্য করলে দেখবেন সোশ্যাল মিডিয়া অনেক রকম এনজাইটির কারণ, অপ্রাপ্তি নিজের জীবনের সাথে তুলনা ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াতে গিয়ে হয় যা মেজাজ খিটখিটে করে তোলে ও হতাশাত জন্ম দেয়। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্যে ত্যাগ করা উচিত সোশ্যাল মিডিয়া।
ব্যক্তিগত সম্পর্কের যত্ন নেয়া
আপনার পরিবার, পার্টনার ও বন্ধুবান্ধব সহ কাছের মানুষদের সাথে সম্পর্কের যত্ন নিন। তাদের সময় দিন। তারা আপনাকে বুঝার সু্যোগ দিলে আর হঠাৎ মেজাজ খারাপ হবে না।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া
নিজের ও অন্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে গুরুত্ব দিন। আপনার আশাপাশের কারো মেজাজ খিটখিটে হলে বুঝার চেষ্টা করুন তাকে। আবার আপনার মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে তা নিয়ন্ত্রণের এবং কাছের মানুষদের সাথে তা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করুন।
নিজেকে বুঝতে শেখা
আপনি কি চান তা বুঝার চেষ্টা করুন। নিজের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। নিজের বিরাট গোল কে পূরণ করতে প্রতিদিন অল্প অল্প করে কাজ করুন সে অনুযায়ী আগান।
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের সবারই কম বেশি মেজাজ খিটখিটে হওয়ার অনেক কারণ থাকে। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় নিজের যত্ন নেয়া। মানসিক চাপ দেয় এমন বিষয় থেকে দূরে থাকা।